কাঁচামাটিয়া (সোয়াইন) নদীর তীরে অবস্থিত, ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল হলো তারুন্দিয়া। কাল পরিক্রমায় আজ তারুন্দিয়া ইউনিয়ন শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, খেলাধুলা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার নিজস্ব স্বকীয়তায় আজও সমুজ্জ্বল। উত্তরে গৌরিপুর উপজেলার ডৌহাখলা ও রামগোপালপুর ইউনিয়ন, পশ্চিমে গৌরিপুর উপজেলার ভাংনামারি ইউনিয়ন, দক্ষিণে উচাখিলা ইউনিয়ন এবং পূর্বে বরহিত ইউনিয়নের মাঝেই এই অঞ্চলের অবস্থান। এই ইউনিয়নেই রয়েছে বিখ্যাত কেইলা বা কালিয়া বিল। তারই উত্তরে লাগোয়া আরও একটি বিল, নাম তার দীঘলি বিল। এই দুটি বিলে প্রচুর দেশী মাছের সমাহার।
এই ইউনিয়নটি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে ১০ কি.মি. পশ্চিমে উচাখিলা ইউনিয়ন থেকে ৩ কি.মি. উত্তরে এবং গৌরিপুর উপজেলা থেকে ১৩ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত। ময়মনসিংহ জেলা শহর থেকে ২২ কি.মি. দক্ষিণ-পূর্বে এবং ফাতেমা নগর রেল স্টেশন থেকে ৮ কি.মি. পুর্বে এর অবস্থান। এই ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা মোটামুটি মানের। এটি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ১০ নং ইউনিয়ন হিসেবে পরিচিত। এর বর্তমান চেয়ারম্যান জনাব হাসান মাহমুদ রানা।
ইউনিয়নের মোট আয়তন ৬৭৪৯ একর বা ২৭.৩২ বর্গ কি.মি.।
ইউনিয়নের গ্রামগুলো হচ্ছে বাখরিপাড়া, সাখুয়া, ভবানীপুর, সুলারী, পলাশকান্দা, পুনাইল, মামদীপুর, রামনগর, পদুর বাহেরা, কোনাপাড়া, সরতাজ বাহেরা, ইন্দ্রজিতৎ খিলা, মধুর বাহেরা, কাজির বাহেরা, নগরযাত্রাপুর, তাহেরপুর, মির্জাপুর, গোপালপুর, বেগুনবাড়ী, মাটিখলা, তারুন্দিয়া, গোয়ালপাড়া, চরজিথর, গাবরবোয়ালি, শ্রিপুর জিথর, গিরিধরপুর, ছোটরাঘবপুর ও রামভদ্রপুর।
তারুন্দিয়া ইউনিয়নের বর্তমান পরিষদ নিম্নরুপ। উল্লেখ্য একজন চেয়ারম্যান, তিনজন মহিলা সদস্য এবং নয় জন সদস্য সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জয়ি হয়ে পরিষদ গঠন করেন। এবং বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ সচিব জনাব মোঃ নুরুজ্জামান।[১]
১৯৭১ সালের ৯ই ডিসেম্বর এই ইউনিয়ন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সাথেই শত্রুমুক্ত হয়। শ্রী বানু চক্রবর্তি এই ইউনিয়নেরই একজন মুক্তিযোদ্ধা। এই ইউনিয়নেরই আব্দুল্লাহ মন্ডল সাহেবের বাড়িতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্প করে বিভিন্ন অপারেশনে অংশ গ্রহণ করত বলে জানা যায়। তবে এই ইউনিয়নে বিখ্যাত কোন রাজাকার ছিল বা আছে এমন ইতিহাস শোনা যায় না।
মোট জনসংখ্যাঃ ৩২,২৮৯ জন (২০১১)। পুরুষ ১৬,৪৮৭ জন (৫১.০৬%), মহিলা ১৬,১০২ জন (৪৮.৯৪%)। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১,১৮২ জন। মোট খানার সংখ্যা ৬,৭৫৫ টি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.০৬%।
ধান, গম, পাট, বেগুন এখানকার প্রধান ফসল। সেচ সুবিধার ব্যাপক প্রসারের ফলে অনেক গম উৎপাদক ভুট্টা উৎপাদনে ঝুঁকে পড়ছে যা প্রধানত মুরগী খামারে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ধান বাংলাদেশের প্রধান ফসল, ২০০৫-০৬ সালে যার উৎপাদনের পরিমান ছিল ২৮.৮ মেট্রিক টন। অন্যদিকে ২০০৫-০৬ সালে গমের উৎপাদন ছিল ১ মেট্রিক টন।
ভূমি মালিক ৬৪.৪২%, ভূমিহীন ৩৫.৫৮%। শহরে ৫৩.৮৭% এবং গ্রামে ৬৫.৪২% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
এই ইউনিয়নের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রয়েছে ৪ টি কমিউনিটি ক্লিনিক। এছাড়াও স্বাস্থ্যকর্মির মাধ্যমে সাধারণ চিকিৎসা সেবা ও সরকারী বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুবিধা সমূহ জনগনের দোরগোরায় পৌছে দেয়া হয়।
বাংলাদেশে শিক্ষার হার ৭২.৯%। অত্র ইউনিয়নেও শিক্ষার হার দেশের সামগ্রিক শিক্ষার হারের প্রায় সমান্তরাল ৭১.২৩%। এই ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে ছিল একসময়কার বিখ্যাত মাইনর স্কুল। বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছেঃ
উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ
তিন ধরনের শিক্ষ্যা প্রতিষ্ঠান লক্ষ্য করা যায়। ১. সাধারণ শিক্ষ্যা প্রতিষ্ঠান ২. সাধারণ শিক্ষ্যার সমন্বয়ে ধর্মিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩. ধর্মিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে রয়েছেঃ
সাধারণত ইসলাম ধর্মালম্বি (সুন্নী, ওয়াহাবি ও আহমাদিয়া মুসলিম) ও সনাতন হিন্দু ধর্মের লোক বসবাস করে এই ইউনিয়নে। খ্রীষ্ট ও বৌদ্ধ ধর্মের লোকও রয়েছে তবে সে সংখ্যা অনেক কম। সাম্প্রতিক সময়ে নাস্তিক্যবাদীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মসজিদ ৭২ টি, মন্দির ৩ টি, ঈদগাহ ময়দান ১৫ টি, ক্লাব ১২ টি।
তাহেরপুর পাথর দরগায় বছরে ২ বার মেলা বসে - অষ্টমি মেলা ও চৈত্র সংক্রান্তি মেলা, আখড়া থেকে রথ যাত্রা, শীতকালে ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিল, হিন্দু ধর্মালম্বি কেউ মারা গেলে শ্রাদ্ধ পরবর্তি কীর্তনের আয়োজন, ইসলাম ধর্মালম্বিদের ২ ঈদ, হিন্দু ধর্মালম্বিদের বিভিন্ন পূজা-পার্বন, বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন ইত্যাদি এই এলাকার মানুষজন সাম্প্রদায়িকতামুক্ত পরিবেশে একে অপরের সাথে মিলেমিশে পালন ও উপভোগ করে থাকে।
এই ইউনিয়নে বিভিন্ন ধরনের লোকশিল্প রয়েছে। তন্মধ্যে কুটিরশিল্প, তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, ওয়েল্ডিং কারখানা, বাঁশ ও কাঠের কাজ উল্লেখযোগ্য। জারিগান এ অঞ্চলের অতি কাছের যা দেশখ্যাত। এছাড়া বাউল ও যাত্রাগানও প্রচলিত।
নদিঃ কাঁচামাটিয়া (সোয়াইন নদী)
বিলঃ কৈলা বা কালিয়া বিল, ফুলুরি ইত্যাদি।
এই ইউনিয়নের বিখ্যাত বাজারগুলো হচ্ছে তারুন্দিয়া বাজার, কোনাপাড়া বাজার, গোয়ালপাড়া বাজার, ভারতি বাজার, সাখুয়া বাজার, সরতাজ বাহেরা বাজার, চরজিথর বাজার, গাবরবোয়ালিয়া বাজার ইত্যাদি।
সাবেক মহাপরিচালক, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
ক্লোজআপ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন।
নগর যাত্রাপুর ফকির বাড়ি পাথর দরগাহ (এখানে বছরে ২ বার মেলা বসে - অষ্টমি মেলা ও চৈত্র সংক্রান্তি মেলা), মির্জাপুর আখড়া, শশীকান্ত বাবু মন্দির, আচার্য্য জগৎ ঠাকুর মন্দির এই ইউনিয়নের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান।
দায়িত্বরত চেয়ারম্যান –জনাব হাসান মাহমুদ
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস